রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসা, রিং বাণিজ্য ও প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায়ের অভিযোগ তুলে তাকে অন্যত্র বদলি বা পদায়নের দাবি জানিয়েছেন তার সহকর্মীরা। হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানসহ ১১ জন চিকিৎসক হাসপাতালের পরিচালকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মহাপরিচালক বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছেন।
সোমবার (১০ মার্চ) বিভাগীয় প্রধান, রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রারসহ ১১ জন চিকিৎসক ডা. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও তাকে বদলির আবেদন জানিয়ে চিঠিটি দেন। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে এবং চিঠিটি গণমাধ্যমের হাতে এসেছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো চিঠিতে চিকিৎসকরা উল্লেখ করেছেন, ডা. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে রিং পরানোয় অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে ভুক্তভোগী রোগী ও স্বজনরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লিখিত অভিযোগ করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও রমেক হাসপাতাল গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্তও করেছে। কিন্তু অভিযোগকারীদের ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহারের চাপ দিচ্ছেন তিনি।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ডা. মাহবুবুর রহমান ক্যাথল্যাবের নীতিমালা লঙ্ঘন করেছেন এবং রিং বিক্রির নিয়ম না থাকলেও রোগীদের কাছে উচ্চমূল্যে রিং বিক্রি করেছেন। এ ঘটনায় বিভাগের চিকিৎসকরা বিব্রত এবং রোগীদের ও চিকিৎসক সমাজের কাছ থেকে বিরূপ মন্তব্য শুনছেন। তার উপস্থিতিতে সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় দ্রুত তাকে অন্যত্র বদলির অনুরোধ জানানো হয়।
ডা. মাহবুবুর রহমান
এদিকে, রিং বাণিজ্য ও অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই ডা. মাহবুবুর রহমান অভিযোগ তুলে নিতে চাপ ও হুমকি দিচ্ছেন বলে ২২ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা সদর থানায় জিডি করেছেন ভুক্তভোগী আতোয়ার রহমান।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ডা. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে রিং বাণিজ্য ও রোগী মৃত্যুর একাধিক অভিযোগের তদন্ত চলছে। বর্তমানে ক্যাথল্যাবে তার ইউনিট বন্ধ রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর গাইবান্ধার আতোয়ার রহমান প্রতারণার মাধ্যমে একটি রিং পরিয়ে তিনটি রিংয়ের টাকা আদায়ের অভিযোগ করেন। এছাড়াও, রিং বিক্রি ও অপচিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ছয়টি লিখিত অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহিন শাহ তার খালু আফজাল হোসেনের অপচিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ করেন। গাইবান্ধার ফরিদা বেগম তার স্বামী লাল মিয়ার ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ জানান। আরেক ভুক্তভোগী মশিউর রহমান জানান, তার মায়ের রক্তনালীতে ব্লক না থাকলেও রিং পরানোর কথা বলে টাকা দাবি করা হয়েছে।
তবে, ডা. মাহবুবুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।