নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তার স্ত্রী সালমা ওসমান, মেয়ে লাবিবা জোহা অঙ্গনা ও ছেলে ইমতিনান ওসমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো তলবি চিঠিতে তাদের আগামী ১২ মে হাজির হতে বলা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত নোটিশের মাধ্যমে এই তথ্য জানা গেছে। অনুসন্ধান টিমের অন্যান্য সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও পিয়াস পাল।
শামীম ওসমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করে টেন্ডার বাণিজ্য, বিভিন্ন খাতে চাঁদাবাজি, পরিবহন ও জুট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কমিশন গ্রহণ, দলীয় পদ ও মনোনয়ন বাণিজ্য, জমি দখলসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি ক্রয় ও দুবাইয়ে ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগও রয়েছে।
শামীম ওসমান ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময়ে তার ব্যক্তিগত উল্লেখযোগ্য সম্পদ ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন মেয়াদ শেষ হলে ২০০১ সালে তিনি ভারতে পালিয়ে যান। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এলে ২০০৯ সালে তিনি দেশে ফেরেন। ২০১১ সালে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি সেলিনা হায়াত আইভীর কাছে পরাজিত হন। এরপর ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিতর্কিত নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৪ সালে তার হলফনামায় ১০ শতাংশ কৃষি জমি, ১৬ শতাংশের ওপর জমিতে দোতলা বাড়ি ও উত্তরায় ৯ কাঠা জমির মালিকানা ছিল। তার বাড়ি, দোকান ভাড়া, অ্যাপার্টমেন্ট, ব্যবসা ও ব্যাংকের আমানতের সুদ বাবদ বছরে আয় ছিল ২৭ লাখ টাকা।
বর্তমানে তার ১২৩ শতাংশ কৃষি জমি, ১০ শতাংশ অকৃষি জমি, পূর্বাচলে উপশহরে ১০ কাঠার প্লট ও ২টি ল্যান্ডক্রুজার গাড়ি রয়েছে। বর্তমানে তার বার্ষিক আয় দাঁড়িয়েছে ৭৯ লাখ টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে ১৩টি পণ্যবাহী জাহাজ। তার জ্বালানি তেল আমদানি, পরিবহন ও সরবরাহকারী একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নসিব পরিবহন নামের একটি কোম্পানি জবরদখলের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও পরিবহন খাত, এলজিইডি ও গণপূর্ত অধিদপ্তরে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। শামীম ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জ ক্লাব ও চাষাড়া ক্লাব জোর করে দখল করেছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার মেয়ে কানাডার নাগরিক বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি ২ কোটি ৫১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫৮ মার্কিন ডলার বা ১৯৩ কোটি ৯১ লাখ ১৮ হাজার ৬০৩ টাকা পাচার ও আত্মসাতের অভিযোগে শামীম ওসমান, তার স্ত্রী সালমা ওসমান লিপি ও শ্যালক তানভীর আহমেদের নামে মামলা করে দুদক।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ২(ক) (২) ধারা লঙ্ঘন করে বিটিআরসির আইজিডব্লিউ লাইসেন্সধারী অপারেটর হিসেবে ৯১ কোটি ৫০ লাখ ৯২ হাজার ৮৬৫ টাকা আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল মিনিটের মূল্য বাবদ অর্জিত ১৯৩ কোটি ৯১ লাখ ১৮ হাজার ৬০৩ টাকা মূল্যের ২ কোটি ৫১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫৮ মার্কিন ডলার (বৈদেশিক মুদ্রা) পাচার করে কিংবা আনয়নযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশ থেকে বাংলাদেশে না এনে মানি লন্ডারিংয়ের মতো অপরাধ করেন।