শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ :

হাঁড়িভাঙ্গা আমের পরিত্যক্ত জমিতে আদা চাষে সাফল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : রবিবার, ২ মার্চ, ২০২৫
  • ৯ বার পঠিত

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে কৃষিকাজ। নব্বই দশকের কৃষি আর আজকের কৃষির মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। এখনকার কৃষিতে শিক্ষিত তরুণদের মেধা আর পরিশ্রমে বদলে যাচ্ছে পুরো কৃষি ব্যবস্থা। ফলে শখের বশে নয়, কৃষিকাজ এখন স্মার্ট তরুণদের পেশা। তেমনি একজন তরুণ উচ্চশিক্ষিত স্মার্ট উদ্যোক্তা শাহিনুল ইসলাম বকুল। রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে চাকরির পেছনে না ছুটে মনেপ্রাণে যুক্ত হন কৃষিকাজে। কৃষিতে জাতীয় পদকসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। বদলে দিয়েছেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার কৃষি চিত্র।

একাধারে মৎস্য চাষ, পরিবেশবান্ধব সবজি, বিভিন্ন প্রকার আম ও ফল চাষ, আধুনিক সেচ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছেন তিনি। কৃষি অর্থনীতিতেও রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কৃষি তথ্য সার্ভিস রংপুরের আঞ্চলিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহাদাৎ হোসেনের পরামর্শে পরীক্ষামূলকভাবে পরিত্যক্ত আম বাগানের নিচে বস্তায় আদা চাষ শুরু করেন শাহিনুল। আর তাতেই পান অভাবনীয় সাফল্য।

এরপর রংপুরের বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. আবু সায়েমের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতায় ৫০০ বস্তায় আদা চাষের প্রদর্শনী করেন এবং একইসঙ্গে হাঁড়িভাঙ্গা আম বাগানের পরিত্যক্ত জমিতে ১২ হাজার বস্তায় বাণিজ্যিকভাবে আদা চাষ করে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। ফলনও পান বেশ ভালো। বস্তায় আদা চাষের উপযুক্ত সময় হলো মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের শুরু পর্যন্ত। প্রতি বস্তার জন্য মাটি ১২/১৫ কেজি, গোবর সার ৪/৫ কেজি, জৈব সার ১ কেজি, ছাই ২ কেজি, তুষ ১ কেজি, ফসফেট ও পটাস ১০ গ্রাম, জিপসাম ১০ গ্রাম, বোরন ৫ গ্রাম ও দানাদার কীটনাশক ৫ গ্রাম—এই মিশ্রণ আদা চাষের জন্য আদর্শ। নভেম্বর-ডিসেম্বরে বস্তা থেকে আদা তোলা হয়। প্রতি বস্তায় উৎপাদন খরচ ৭০/৮০ টাকা। আর উৎপাদিত আদা বিক্রি হয় ১২০/১৫০ টাকায়। তিনি বারী-২ ও স্থানীয় থাইল্যান্ড জাতের আদা চাষ করে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।

শাহিনুল ইসলাম বকুল বলেন, এক হাঁড়িভাঙ্গা আমই এলাকার কৃষক-কৃষাণীদের ভাগ্যের পরিবর্তন এনেছে। আর সেই হাঁড়িভাঙ্গা আমের পরিত্যক্ত জমিতে বা বাড়ির আশপাশের জমিতে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখাচ্ছে বস্তায় আদা চাষ। আদা একটি মসলা জাতীয় ফসল, যা মূলত আমদানি নির্ভর। বস্তায় আদা চাষ একটি লাভজনক পেশা। বাগানের পরিত্যক্ত জমিতে বস্তায় আদা চাষ করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনা সম্ভব। একইসঙ্গে নিজেদের ভাগ্যেরও পরিবর্তন ঘটানো যাবে। তিনি জেলা ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসারের কাছে আদা সংরক্ষণাগার, প্রদর্শনী ও উত্তম চাষাবাদের জন্য কৃষক স্কুল স্থাপনের দাবি জানান। তিনি হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগানের পরিত্যক্ত জমিতে বস্তায় আদা চাষের স্বপ্ন দেখেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি গ্রামে প্রত্যেক বাড়িতে ১০/২০ বস্তায় আদা চাষের কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। এ জন্য হর্টিকালচার সেন্টার বুড়ির হাট রংপুরের সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

রংপুর বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক ড. মো. আবু সায়েম বলেন, এক সময় রংপুর ও নীলফামারিতে প্রচুর পরিমাণে আদা চাষ হতো। কিন্তু রোগের কারণে আদা চাষ কমে গিয়েছিল। বস্তায় আদা চাষ শুরু হওয়ায় এই অঞ্চলের কৃষিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যোগে রংপুর অঞ্চলের পাঁচটি জেলায় এবার ১২০টি প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। প্রতিটি প্লটে ৫০০ বস্তা করে আদা চাষ করা হয়েছে। সেই হিসেবে ৬০ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। এ ছাড়া কৃষক পর্যায়েও লক্ষাধিক বস্তায় আদা চাষ হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো কিছু জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2024 nabakal.com
Design & Development BY Hostitbd.Com