ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী আজ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে যে তারা গত বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ভারতীয় সীমান্ত থেকে আসা ২৫টি ‘হারোপ ড্রোন’ ভূপাতিত করেছে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী আজ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী ‘সফট-কিল’ (প্রযুক্তিগত) ও ‘হার্ড-কিল’ (অস্ত্র ব্যবহার) উভয় কৌশল ব্যবহার করে এই ড্রোনগুলো ভূপাতিত করেছে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী আরও জানান, করাচি ও লাহোরসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় এই ড্রোনগুলো ভূপাতিত করা হয়েছে এবং এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সামনে ভূপাতিত ড্রোনগুলোর ধ্বংসাবশেষের ছবিও তুলে ধরেন।
তিনি ভারতের এই পদক্ষেপকে ‘গুরুতর উসকানি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ভারতের এই ‘নগ্ন আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে’।
হারোপ ড্রোন কী?
হারোপ ড্রোন মূলত একটি ‘লোইটারিং মিউনিশন’, যা আকাশে চক্কর দিতে দিতে লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করে এবং সুযোগ বুঝে আঘাত হানে। এটি ইসরাইলের এয়ারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (আইএআই)-এর তৈরি একটি অত্যাধুনিক ড্রোন। এই ড্রোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে অথবা মানুষের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিচালনা করা সম্ভব। এটি একইসাথে একটি মনুষ্যবিহীন আকাশযান (ইউএভি) এবং ক্ষেপণাস্ত্রের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। তবে বিশেষত্ব হলো, যদি কোনো লক্ষ্যবস্তু খুঁজে না পাওয়া যায়, তবে এটি নিরাপদে ঘাঁটিতে ফিরে আসতেও সক্ষম। ইসরাইলের তৈরি এই বিশেষ ড্রোন ট্রাক, জাহাজ বা বিমানের ক্যানিস্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা যায় এবং এর ডানা ভাঁজযোগ্য।
বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণ:
জামশোরোর মেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. ফাহাদ ইরফান সিদ্দিকী এই প্রসঙ্গে বলেন, হারোপ একটি মিলিটারি-গ্রেড প্রযুক্তি, যা একইসাথে তথ্য সংগ্রহ এবং অস্ত্র বহন করে হামলার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। তিনি আরও বলেন, সাধারণ বেসামরিক ড্রোনের নিয়ন্ত্রণ ইউএইচএফ ফ্রিকোয়েন্সি জ্যামার ব্যবহার করে বিচ্ছিন্ন করা গেলেও, হারোপের মতো সামরিক ড্রোন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে চালিত হওয়ায় এদের নিয়ন্ত্রণ ব্লক করা অত্যন্ত কঠিন। পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী যেখানে একটি-দুটি নয়, রীতিমতো ২৫টি ‘হারোপ ড্রোন’ ভূপাতিত করার দাবি করেছে, তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার প্রসঙ্গ:
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে বেসামরিক স্থানে হামলা একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। হারোপের মতো স্বয়ংক্রিয় ড্রোনগুলো ‘প্রাণঘাতী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবস্থার’ (Lethal Autonomous Weapon Systems) আওতায় পড়ে কি না, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্ক বিদ্যমান। কারণ এই ড্রোনগুলো মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ এবং হামলা করতে সক্ষম।
প্রেক্ষাপট:
উল্লেখ্য, ভারত গত এক দশকে ইসরাইলের কাছ থেকে প্রায় ২.৯ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে, যার মধ্যে রাডার, নজরদারি ড্রোন, কমব্যাট ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র উল্লেখযোগ্য। ২০১৬ ও ২০২০ সালে আজারবাইজান নাগোর্নো-কারাবাখ যুদ্ধে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে হারোপ ড্রোন ব্যবহার করেছিল। এছাড়াও, সিরিয়ায়ও এই ড্রোনের ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালে ইসরাইলের তৈরি এই ড্রোন একটি সিরীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছিল।
সূত্র: ডন