রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০৬ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ :

অতিমাত্রায় শব্দদূষণ: নীরব ঘাতক

আল আব্দুল্লাহ
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫
  • ১৩ বার পঠিত

নিরব ঘাতক শব্দ দূষণ
করছে রিক্ত নিচ্ছে ভূষণ
পরিবর্তিত হচ্ছে জলবায়ু
ঘাতক নিচ্ছে কেড়ে আয়ু।
-বিধান চন্দ্র রায়

বর্তমানে বাংলাদেশে শব্দদূষণ এক ভয়াবহ পরিবেশগত সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। ঢাকা তে আমরা সবাই ভুলেই গিয়েছি শব্দ দূষণ কি। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ প্রধান প্রধান শহরগুলোতে শব্দদূষণের মাত্রা অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র (WHO) মতে, একটি নির্দিষ্ট মাত্রার উপরে শব্দ মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

শব্দদূষণের প্রধান কারণসমূহ:
যানবাহনের শব্দ: শহরের রাস্তায় অতিরিক্ত যানজট এবং যানবাহনের অপ্রয়োজনীয় হর্ন বাজানোর ফলে শব্দদূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়ে চলেছে। যে যার মতন নিয়মের বালাই না করেই হর্ন বাজিয়ে যান। কোথায় কোন ধরনের শব্দ দূষণের সাইনবোর্ড ও দেখা যায় না ইদানিং।

নির্মাণ কাজ: শহরের বিভিন্ন স্থানে দিনরাত চলমান নির্মাণকাজ থেকে উচ্চমাত্রার শব্দ তৈরি হচ্ছে, যা আশপাশের পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

লাউডস্পিকারের ব্যবহার: সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে লাউডস্পিকারের অতিরিক্ত ব্যবহারে শব্দদূষণের মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

কলকারখানা: শিল্প এলাকায় কলকারখানার যন্ত্রপাতির শব্দ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।

 

স্বাস্থ্যগত প্রভাব:
শব্দদূষণ স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত শব্দের কারণে শ্রবণশক্তি হ্রাস, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, মাইগ্রেন এবং মানসিক উদ্বেগ এর মতো সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং বয়স্কদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে।

 

আইনি পদক্ষেপ ও চ্যালেঞ্জ:
বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সালে “শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা” প্রণয়ন করেছে, যেখানে আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাসিক এলাকায় সর্বোচ্চ শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ ডেসিবেল। তবে, এই আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের অভাব এবং সাধারণ জনগণের অসচেতনতার কারণে সমস্যাটি ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

 

সমাধানের উপায়: 
✔️ যানবাহনে হর্ন বাজানোর ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা।
✔️ নির্মাণকাজ ও কলকারখানায় শব্দনিয়ন্ত্রণ সরঞ্জাম ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা।
✔️ সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে লাউডস্পিকারের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা।
✔️ জনগণের মধ্যে শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা।

সর্বপরি, শব্দদূষণ প্রতিরোধে সরকার, প্রশাসন ও সাধারণ জনগণকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সচেতনতা ও আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। শব্দদূষণ মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো কিছু জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2024 nabakal.com
Design & Development BY Hostitbd.Com