চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে চারটি বাড়ি, তিনটি চারতলা ভবন, দুটি প্লট, বরেন্দ্র অঞ্চলে ৩০ বিঘা বাগান, ঢাকার রায়ের বাজারে বাড়ি ও প্লট – এই হলো নুরুল ইসলামের সম্পদের খতিয়ান। দৃশ্যমান কোনো আয়ের উৎস না থাকলেও তার দুই ছেলে দামী মোটরসাইকেলে ঘুরে বেড়ান। অভিযোগ উঠেছে, এসবই তিনি গড়ে তুলেছেন মাদক কারবারি করে। তিনটি মাদক মামলার আসামি নুরুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি এবং চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। এলাকায় তিনি “মাদকের গডফাদার” হিসেবে পরিচিত।
হেরোইনের অন্যতম প্রবেশদ্বার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন “মাদকের স্বর্গরাজ্য” হিসেবে পরিচিত। দুই দশক ধরে এই ইউনিয়ন দিয়ে হেরোইন, ফেনসিডিল এবং এখন ইয়াবার বিপুল পরিমাণ চালান আসছে। অভিযোগ, নুরুল ইসলামই এখন এই অঞ্চলের মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ করছেন। ক্ষমতার পালাবদলেও তার মাদক কারবারে কোনো প্রভাব পড়েনি।
পদ্মা নদী পেরিয়ে ভারত থেকে আসে মাদকদ্রব্য। নুরুল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ মাদক ঢোকার অন্যতম রুট এই চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, একসময় দিনমজুর ছিলেন নুরুল। ভারত থেকে লোহা এনে চোরাচালান করতেন। নব্বইয়ের দশকে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ২০০০ সালের দিকে ঢাকার রায়ের বাজারের এক মাদক কারবারিকে বিয়ে করার পর তার উত্থান শুরু হয়। ভাই ও ভাতিজাদের নিয়ে গড়ে তোলেন মাদকের বিশাল সাম্রাজ্য।
কৌশলী নুরুল একসময় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাবশালী ছিলেন। এখন তিনি বিএনপিপন্থী নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরেও তিনি এলাকাতেই আছেন এবং মাদক কারবার চালাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, কৃষক দলের এক নেতা তাকে শেল্টার দিচ্ছেন। পিসিপিআর অনুযায়ী, নুরুল ইসলাম তিনটি মাদক মামলার আসামি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানায়, চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের অনেকেই মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত। জনপ্রতিনিধিরাও এই সিন্ডিকেটে জড়িত। স্থানীয়রা বলছেন, নুরুল মেম্বারই এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা। তার পুরো পরিবারই মাদকের সঙ্গে জড়িত। ক্ষমতার পালাবদলেও তিনি বহাল তবিয়তে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন।
নুরুলের ভাই মাইনুল হাজী, মুনিরুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম ও ভাতিজা আলমগীর হোসেনও মাদক ব্যবসায় জড়িত। তাদের বিরুদ্ধেও মাদক মামলা রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারে তারা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন। নুরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।