বুধবার, ১১ জুন ২০২৫, ০৫:৪৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ :
বেলুচিস্তানে স্কুল বাসে বোমা হামলায় নিহত ৫: ভারতের দিকে আঙুল ইশরাক হোসেনকে আজই মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি আবদুস সালামের হাসনাত আব্দুল্লাহকে হুমকির প্রতিবাদে দেবীদ্বারে উত্তাল বিক্ষোভ: জড়িতদের বিচার দাবি নগদ আর্থিক কেলেঙ্কারি: প্রাক্তন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি পথে বাংলাদেশ ব্যাংক স্ত্রী-সন্তানসহ শামীম ওসমানকে দুদকের তলব সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা ভুটানের নতুন রাষ্ট্রদূত দাশো খারমা ঢাকায় যোগদান টানা দু’বার বৃদ্ধির পর কমল সোনার দাম, ভরিতে হ্রাস সাড়ে তিন হাজার আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধে দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে ‘মার্চ টু ঢাকা’র হুঁশিয়ারি নাহিদ ইসলামের ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে তুমুল গোলাবর্ষণ, নিহত ১৬

আবরার হত্যা মামলা: ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : শনিবার, ৩ মে, ২০২৫
  • ৫১ বার পঠিত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহালের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

আজ শনিবার (৩ মে) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের স্বাক্ষরের পর  ১৩১ পৃষ্ঠার বিস্তারিত এই রায় প্রকাশ করা হয়েছে। আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম শাহজাহান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

 

এর আগে, গত ১৬ মার্চ এই বেঞ্চ আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায় অক্ষুণ্ন রেখে সকল আসামির (২০ জন) মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। একইসঙ্গে পাঁচ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশও বহাল রাখা হয়।

রায় ঘোষণার সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে বি রুমি, জহিরুল ইসলাম সুমন ও নূর মোহাম্মদ আজমী এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার সুমাইয়া আজিজ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, আসামিপক্ষে আইনজীবী মাসুদ হাসান চৌধুরী ও আজিজুর রহমান দুলু তাদের মক্কেলদের প্রতিনিধিত্ব করেন। আদালতের কার্যক্রম চলাকালে আবরার ফাহাদের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন, যারা দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পর এই রায়কে কিছুটা হলেও সান্ত্বনা হিসেবে দেখছেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ জন আসামি সকলেই বুয়েট ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন: বুয়েট ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু (মেকানিক্যাল ইঞ্জনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ)। এছাড়াও এই তালিকায় মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), মোজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুর রহমান মাজেদ (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), এস এম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোসের্স, ১৬ ব্যাচ), শামছুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল) এবং এসএম মাহামুদ সেতু (কেমিকৌশল) রয়েছেন।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি হলেন বুয়েট ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), সদস্য আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) ও মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই, ১৭ ব্যাচ)। এই পাঁচজনও হত্যাকাণ্ডের সময় ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

উল্লেখ্য, আবরার ফাহাদ ছিলেন বুয়েটের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে তাকে ডেকে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসের জের ধরে তাকে শিবিরকর্মী আখ্যা দিয়ে রাতভর মারধর করা হয়। পরদিন ভোরে হলের সিঁড়ির কাছে তার নিথর দেহ পাওয়া যায়। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় তোলে।

আবরারকে হত্যার পর তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান দ্রুত তদন্ত শেষ করে মাত্র ৩৭ দিনের মাথায়, একই বছরের ১৩ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে তা অনুমোদনের জন্য মামলার যাবতীয় নথি উচ্চ আদালতে প্রেরণ করা হয়, যা ‘ডেথ রেফারেন্স’ নামে পরিচিত। এই মামলার ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের খালাস চেয়ে করা আপিলের শুনানি হাইকোর্টে গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি ৬ হাজার ৬২৭ পৃষ্ঠার ডেথ রেফারেন্স ও মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। এরপর আসামিরা দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে ফৌজদারি আপিল ও জেল আপিল করেন।

এই রায় প্রকাশের মাধ্যমে আবরার ফাহাদের পরিবারের সদস্যরা কিছুটা হলেও ন্যায়বিচারের আশা দেখছেন। তবে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আইনি প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি এবং তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পাবেন।

এই হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি এবং ক্যাম্পাসে সহিংসতার একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো কিছু জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2024 nabakal.com
Design & Development BY Hostitbd.Com