জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ শুক্রবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, জুলাই অভ্যুত্থান, বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে।
এনসিপির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “দল হিসেবে আগে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তাদের দোষ স্বীকার করতে হবে। এরপর আওয়ামী লীগ নিয়ে অন্য কোনো আলোচনা হতে পারে, কিন্তু তার আগে নয়।”
রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব বা হস্তক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরা সন্দিহান, যেহেতু আমাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক। আমরা মনে করছি, সেটা রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা। রাজনীতি রাজনীতিবিদরাই নির্ধারণ করবে। রাজনীতির ঘটনাপ্রবাহ বা পরবর্তীতে কোন দিকে যাবে, সেটা রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত। সেটাতে আমরা সন্দিহান বলেই আমাকে স্ট্যাটাসটি দিতে হয়েছে।”
১১ মার্চ সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পরে আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায়, প্রোগ্রামে আমাদের দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে। আর ১১ তারিখের মিটিংয়ের প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল। সেখানে অপরপ্রান্তে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন। আমি আমার স্ট্যাটাসেই সেখানকার ঘটনাপ্রবাহ পরিষ্কার করেছি।”
এনসিপির এই নেতা আরও বলেন, “সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এসব নিয়ে কথা বলার জন্য আমাদের আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিছুদিন আগে সেনাবাহিনী প্রধানের একটা বক্তব্য দেখেছেন, সেই বক্তব্যকে আমি ব্যক্তিগতভাবে বা আমরা অনেকেই দেশের মধ্যে এটা নিয়ে কথা হয়েছে যে, রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অসমীচীন হিসেবেই ধরা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানকে যেভাবে অ্যাড্রেস (সম্বোধন) করা হয়েছে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ইঙ্গিত করা হয়েছে আওয়ামী লীগসহ। সার্বিক বিষয়ে আলোচনার কথা যখন বলা হয়েছিল, গিয়েছিলাম। তখন এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমার স্ট্যাটাসে সবকিছু স্পষ্ট করা হয়েছে।”
নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো উদ্বেগ আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “৫ আগস্টের আগে ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করেছি। ফ্যাসিবাদী একটা শক্তি ছিল, এজেন্সি ছিল, রাষ্ট্রপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে ছিল, আমরা বারবারই বলছি আমাদের লড়াই অব্যাহত রয়েছে। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত ছাত্র-নাগরিক, ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলো আমরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি নিরাপত্তা ঝুঁকি অনুভব করছি না।”
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার চলাকালীন আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চাই। খুনিদের বিচারের কার্যক্রম দৃশ্যমান হতে হবে।”
সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “আজ থেকে সাত মাস আগে দেশে যে ফ্যাসিবাদ জেঁকে বসেছিল, ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ থেকে দেশকে মুক্ত করেছে। আমরা ভেবেছিলাম আমরা মুক্ত হয়েছি, আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু রাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় তাদের লোক পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে।”
কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি জানান, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় নাগরিক পার্টি সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত রাখবে।