সুনামগঞ্জে জনতার জলমহাল লুট: ৭ দিনে ১০ কোটি টাকার মাছ গায়েব
নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট সময় :
শনিবার, ৮ মার্চ, ২০২৫
১০২
বার পঠিত
ছবি সংগৃহীত
সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত জলমহালের মাছ লুট করেছে কয়েকটি গ্রামের মানুষ। ৫ই আগস্টের পটপরিবর্তনের পর বিএনপি নেতাদের অংশীদারিত্ব থাকলেও জলমহাল রক্ষা করতে পারছেন না দিরাই-শাল্লার আওয়ামী লীগ সমর্থক ইজারাদার। গত ৭ দিনে দুই উপজেলার ১১টি বিলের প্রায় ১০ কোটি টাকার মাছ লুটপাট হয়েছে বলে দাবি ইজারাদারদের।
সর্বশেষ, শুক্রবার সকালে দিরাই উপজেলার সতোয়া বিলে কয়েক হাজার মানুষ মাছ লুট করতে যায়। প্রথমে পুলিশ বাধা দিলেও গ্রামের লোকজনের সামনে অসহায় হয়ে পিছু হটে। পরে ইউএনও’র নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ এলে গ্রামবাসী বিল থেকে সরে পড়ে। তবে, যাওয়ার আগে মাছ লুট করতে না পারায় পুলিশের সামনেই জলমহালের খলায় আগুন লাগিয়ে দেয় তারা।
জানা যায়, দিরাই উপজেলার কামান বিল লুটপাটের মধ্য দিয়ে জলমহাল লুটের উৎসব শুরু হয় দিরাই-শাল্লায়। কাগজপত্রে এই বিলের ইজারাদার চরনারচর বিএম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। সমিতির নামে ইজারা থাকলেও এই জলমহালের মালিক হিসেবে পরিচিত দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ মিয়া ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জয় কুমার বৈষ্ণব।
শুক্রবার ভোর থেকে পাশের নোয়াগাঁও, কার্তিকপুর, মাইতি, হাসনাবাদ, শ্যামারচর, আটগাঁও, মির্জাপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের হাজারো মানুষ জড়ো হয়ে জলমহালে মাছ লুট করা শুরু করে।
উদীর হাওরের ইজারাদার সুধীর রঞ্জন দাস বলেন, এ বছর ৯০ লাখ টাকা ইজারামূল্য ছিল বিলটির। এক কোটি টাকার মাছ আহরণ করা হয়েছে। লুট হয়েছে কমপক্ষে তিন কোটি টাকার মাছ। তাদের জলমহলে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়ের পুঁজি রয়েছে বলে জানান তিনি।
জয়পুর-আতনি জলমহালের ইজারাদার জয়পুর আতনি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। এ বছর ভ্যাটসহ ৮৬ লাখ টাকায় ইজারা নেয়া হয় এই জলমহালটি। এখানে পাঁচ কোটি টাকার মাছ লুট হয়েছে বলে দাবি ইজারা সমিতির সভাপতি বিকাশ রঞ্জন দাস। এই বিলে পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়।
শাল্লার আটগাঁওয়ের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য রাহুল দাস জানান, তাদের এলাকার লুট হওয়া বিলের ইজারাদার সমিতির সঙ্গে অংশীদার ছিলেন, দিরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুর মিয়া চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান কাজী।
জেলা বিএনপি’র সাবেক উপদেষ্টা, বর্তমানে দিরাই উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেল বলেন, জলমহাল লুট শুরু করেছেন অন্য উপজেলার মানুষ। পরে দিরাইয়ের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ উৎসবের মতো পলো বাওয়া শুরু করে।
তিনি বলেন, জলমহাল লুটের ঘটনায় দিরাই-শাল্লা’র মানুষের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, আমরা সেটি ঠেকানোর চেষ্টা করছি।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জানান, জলমহাল লুটপাটের ঘটনা ইজারা কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ইজারাদাররা যদি মামলা করেন, আমরা আইনানুগভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেবো, যাতে দুষ্কৃতকারীরা পার না পায়।