গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে, একই মালিকের অধীনে একাধিক গণমাধ্যম না রাখার পাশাপাশি সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য একটি বিশেষ আইন প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে।
শনিবার (২২ মার্চ) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এই প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ।
এরপর সাংবাদিকদের তিনি জানান, সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য একটি আইন তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। এ সময় কমিশনের অন্যান্য সদস্য ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
কামাল আহমেদ জানান, “গণমাধ্যমের মালিকানায় কিছু জটিলতা দেখা যাচ্ছে। অনেক গণমাধ্যমের নেতৃত্বে পরিবর্তন এলেও মালিকানা একই রয়ে গেছে। আমরা সুপারিশ করেছি, ‘ক্রস ওনারশিপ’ বাতিল করতে হবে। অর্থাৎ, একই মালিকের একাধিক গণমাধ্যম থাকতে পারবে না। মালিককে যেকোনো একটি মাধ্যম বেছে নিতে হবে। বাকিগুলোর মালিকানা হস্তান্তর করতে হবে বা শক্তিশালী মাধ্যমের সাথে একীভূত করতে হবে। কর্মীদের স্বার্থও যেন সুরক্ষিত থাকে, সে বিষয়ে বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে, একই ব্যক্তি টিভি ও পত্রিকার মালিক হতে পারেন না।”
তিনি আরও বলেন, “গণমাধ্যমের ইতিহাস পর্যালোচনা করে ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। টিভি, পত্রিকা, রেডিও ও অনলাইনে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। তবে সাংবাদিকতার মৌলিক সমস্যাগুলো প্রায় একই।”
টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর আবেদন সম্পর্কে তিনি বলেন, “অনুমোদনের আবেদনে জনগণের কথা কম, সরকারের উন্নয়নের কথা বেশি। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিবেচনা করে সুপারিশ করেছি।”
বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের স্বায়ত্তশাসনের সুপারিশ করে তিনি জানান, একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান এই দুটি মাধ্যম পরিচালনা করবে। বাসসকে এদের নিউজরুম হিসেবে ব্যবহার করলে, সরকারি সম্পদের অপচয় কমানো যাবে।
কামাল আহমেদ বলেন, “সাংবাদিকতার পথে বাধা সৃষ্টিকারী আইন ও নীতিমালার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য একটি আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এমনকি, আইনের একটি খসড়া অধ্যাদেশও জমা দেওয়া হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে, সাংবাদিকদের ফোন চাইলেই তল্লাশি করা যায় না।”
সাংবাদিকতায় শুরুর বেতন বিসিএস নবম গ্রেডের সমান রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। ঢাকায় কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য আলাদা ভাতার প্রস্তাবও করা হয়েছে। ওয়েজবোর্ড নিয়ে চলমান মামলার বিষয়েও সুপারিশ করা হয়েছে। সাংবাদিকদের বিজ্ঞাপন এজেন্টের কাজ করতে না দেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে।
ডিএফপির মিডিয়া তালিকা নিয়ে কামাল আহমেদ বলেন, “সরকারি হিসাবে ঢাকায় ১ কোটি ৫১ লাখ পত্রিকা ছাপা হয়, যা বাস্তবতার সাথে মেলে না। সরকারি বিজ্ঞাপন নেওয়ার জন্য এই কারসাজি করা হয়েছে। ডিএফপির তালিকায় ৬০০-এর বেশি পত্রিকা থাকলেও, ঢাকায় বিক্রি হয় মাত্র ৫২টি।”
টিআরপি নিয়েও অনিয়মের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সারা দেশে ৮ হাজার ডিভাইস বসানোর কথা থাকলেও, বসানো হয়েছে মাত্র ২০০টি। এগুলো যাচাইযোগ্য হতে হবে এবং তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যাচাইয়ের সুযোগ থাকতে হবে।”
প্রতিবেদনটি অনলাইনে প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।