রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২০ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ :

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের পুনঃসংযোগ, দিল্লি সতর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫
  • ৪ বার পঠিত

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর, কূটনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন সমীকরণ দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘদিনের বৈরিতা কাটিয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ উন্নতি লাভ করছে। এই ঘটনাটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের জন্য গভীর পর্যবেক্ষণের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কয়েক দশক ধরে শীতল সম্পর্কের পর, ঢাকা ও ইসলামাবাদ সম্প্রতি সরাসরি বাণিজ্যিক লেনদেন শুরু করেছে। চাল আমদানির মাধ্যমে এই বাণিজ্যিক সম্পর্কের সূচনা হয়েছে। এর পাশাপাশি, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল, সামরিক যোগাযোগ এবং ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণসহ নিরাপত্তা সংক্রান্ত সহযোগিতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

ঐতিহাসিকভাবে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। সেই সময় ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থন করেছিল। কিন্তু, সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর, ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে।

সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবিরের মতে, “গত ১৫ বছর ধরে, পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে। তবে, বর্তমানে এই সম্পর্ক দুটি স্বাভাবিক প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে।”

তবে, এই সম্পর্ক উন্নতি ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ, কারণ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক বিদ্যমান। শেখ হাসিনার বিদায়ের পর, ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে সম্পর্কও কিছুটা শীতল হয়েছে।

কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠন একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। লন্ডনের কিংস কলেজের সিনিয়র ফেলো আয়েশা সিদ্দিকা মনে করেন, “পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে বর্তমানে একটি কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তারা সম্মিলিতভাবে ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধ তৈরি করতে চায়।”

দুই দেশের মধ্যে সামরিক সম্পর্কের উন্নতিও লক্ষণীয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে, একটি উচ্চ পর্যায়ের বাংলাদেশি সামরিক প্রতিনিধিদল পাকিস্তান সফর করে এবং পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের সাথে আলোচনা করে। এরপর, ফেব্রুয়ারিতে, বাংলাদেশি নৌবাহিনী করাচি উপকূলে পাকিস্তানি নৌবাহিনীর মহড়ায় অংশ নেয়।

সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার বীণা সিক্রি এই পরিস্থিতিকে “ডেজা ভু” মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, অতীতেও পাকিস্তান বাংলাদেশি ইসলামপন্থী দলগুলোর সাথে সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করেছে, যা ভারতের জন্য নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণ ছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, অর্থনৈতিক ও ভাষাগত সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশ ভারত-বিরোধী অবস্থানে যেতে পারবে না। তবে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়গুলোর সমাধান না হলে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা কঠিন হবে। বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় সংঘটিত নৃশংসতার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, দুই দেশ প্রথমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করতে পারে, যা বর্তমানে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের কম। আগামী এপ্রিলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফরের সময় এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো কিছু জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2024 nabakal.com
Design & Development BY Hostitbd.Com