রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১১ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ :

ড. ইউনূস ও জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে লাখো রোহিঙ্গার ইফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫
  • ৩ বার পঠিত

আজ ১৪ মার্চ, শুক্রবার, উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির এক বিশেষ মুহূর্তের সাক্ষী থাকল। প্রায় এক লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতারে অংশ নিলেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এই ইফতার শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা ছিল না, বরং ছিল মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

দুপুর ১টায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে কক্সবাজার পৌঁছান জাতিসংঘ মহাসচিব। তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি উখিয়ার দিকে রওনা হন তাঁরা। সেখানে পৌঁছে তাঁরা প্রথমেই পরিদর্শন করেন রোহিঙ্গা লার্নিং সেন্টার, যেখানে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এরপর তাঁরা যান রোহিঙ্গাদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে, যেখানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের প্রচেষ্টা চলছে। সবশেষে, তাঁরা পাটজাত পণ্যের উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন, যেখানে রোহিঙ্গা নারীরা নিজেদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

দিনের শেষে, যখন সূর্য অস্তমিত হওয়ার সময় ঘনিয়ে এলো, তখন শুরু হলো ইফতারের আয়োজন। লাখো রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে মাটিতে বসে ইফতার করেন ড. ইউনূস ও জাতিসংঘ মহাসচিব। এই মুহূর্তটি ছিল আবেগঘন। নিজেদের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেন অনেক রোহিঙ্গা।

ইফতার শেষে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “আজ আমি যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের সাহস আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। তাদের গল্পগুলো শুধু কষ্টের নয়, বরং বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছারও প্রতীক। মিয়ানমারে তাদের উপর যে অত্যাচার হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।”

তিনি আরও বলেন, “মিয়ানমারের সকল পক্ষের প্রতি আমার আহ্বান, তারা যেন সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। কোনোভাবেই যেন সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বা সহিংসতা উস্কে দেওয়া না হয়।”

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, “বহু বছর ধরে নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার হওয়ার পর, আট বছর আগে রাখাইন রাজ্যে গণহত্যার শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এখন বিশ্ববাসীর উচিত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো। রোহিঙ্গারা তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনই এই সংকটের একমাত্র সমাধান।”

এই ইফতার অনুষ্ঠানটি শুধু একটি সামাজিক আয়োজন ছিল না, বরং ছিল বিশ্ববাসীর কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা।

এটি মনে করিয়ে দেয় যে, মানবিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা কতটা জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো কিছু জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2024 nabakal.com
Design & Development BY Hostitbd.Com