বিশ্বের বায়ু দূষণের তালিকায় উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা আইকিউএয়ারের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ২০টি শহরের মধ্যে ১৩টিই ভারতে অবস্থিত। শুধু তাই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানীর তালিকায়ও শীর্ষস্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী দিল্লি। এই ভয়াবহ দূষণের কারণে ভারতীয় নাগরিকদের গড় আয়ু উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) প্রকাশিত আইকিউএয়ারের ২০২৪ সালের বিশ্ব বায়ু মান প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের বাইরনিহাট বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। দিল্লি এখনও বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এছাড়া, ২০২৩ সালে দূষিত দেশের তালিকায় ভারতের অবস্থান ছিল তৃতীয়, যা ২০২৪ সালে পঞ্চম স্থানে নেমে এসেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দূষণের তালিকায় ভারতের অন্যান্য শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে পাঞ্জাবের মুলানপুর, ফরিদাবাদ, লোনি, গুরুগ্রাম, গঙ্গানগর, গ্রেটার নয়ডা, মুজাফফরনগর, হনুমানগড় এবং নয়ডা।
আইকিউএয়ারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভারতে বাতাসে পিএম২.৫-এর ঘনত্ব ছিল প্রতি কিউবিক মিটারে ৫৪.৪ মাইক্রোগ্রাম, যা ২০২৪ সালে কমে ৫০.৬ মাইক্রোগ্রামে দাঁড়িয়েছে। তবে, দিল্লির বাতাসে পিএম২.৫-এর ঘনত্ব এখনও প্রতি কিউবিক মিটারে ৯১.৬ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ডের চেয়ে অনেক বেশি। ডব্লিউএইচও-এর মানদণ্ড অনুযায়ী, প্রতি কিউবিক মিটারে পিএম ২.৫-এর পরিমাণ ৫ মাইক্রোগ্রামের নিচে থাকা উচিত।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের প্রায় ৩৫ শতাংশ শহরে পিএম ২.৫-এর পরিমাণ ডব্লিউএইচও-এর মানদণ্ডের ১০ গুণেরও বেশি। এর ফলে, ভারতীয় নাগরিকদের গড় আয়ু ৫.২ বছর কমে যাচ্ছে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়ছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শুধুমাত্র বায়ু দূষণের কারণে ভারতে প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ মানুষ মারা যায়।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন। তিনি বলেন, ভারত বায়ু মানের তথ্য সংগ্রহে অগ্রগতি করলেও, দূষণ নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত পদক্ষেপের অভাব রয়েছে। তিনি জরুরি ভিত্তিতে দূষণ কমিয়ে নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।