ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড থেকে এস আলম গ্রুপের অনুকূলে দেওয়া ১৭৫০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ও গ্রেস পিরিয়ডের মেয়াদ বৃদ্ধিতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের দায় খুঁজে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের জিএম সারোয়ার হোসেন এবং ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডিসহ চার শীর্ষ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক আবু সাঈদের নেতৃত্বে একটি দল তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আসা কর্মকর্তারা ঋণ নবায়নের সময় কর্মরত ছিলেন। তাদের সময়ে ঋণের ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের মেয়াদ ১ বছর থেকে বাড়িয়ে ২ বছর এবং গ্রেস পিরিয়ডের মেয়াদ ১৮ মাস থেকে ২৪ মাস করা হয়। দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ঋণ প্রদানে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও পরোক্ষভাবে তাদের দায় রয়েছে। সূত্র আরও জানায়, এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের অনুকূলে ৮৫০ কোটি টাকা, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের অনুকূলে ৫০০ কোটি টাকা এবং এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের অনুকূলে ৪০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে এই ঋণগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধিতে ব্যাংক কর্মকর্তারা সহায়তা করেন। জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়া কর্মকর্তারা হলেন ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি কাজী মো. রেজাউল করিম, ইভিপি মো. শামসুদ্দোহা, মীর রহমত উল্লাহ এবং এসইভিপি আবু সাঈদ মো. ইদ্রিস। তবে, ব্যাংকটির পর্যবেক্ষক ও পরিচালক মো. সারোয়ার হোসেন এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তফা চৌধুরীকে তলব করা হলেও তারা উপস্থিত হননি।
এর আগে, ২৬ ফেব্রুয়ারি একই অভিযোগে তিন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে তলবি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইপ্রাসসহ বিভিন্ন দেশে এক বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, মোনিকো ফার্মা লিমিটেডের অনুকূলে ১০০ কোটি টাকার ঋণ সংক্রান্ত অনিয়মের তথ্যও রয়েছে।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় এস আলমের ছেলে এবং ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলমকে আসামি করে তিনটি মামলা করা হয়েছে।
গত ১৯ ডিসেম্বর ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম চাকতাই শাখা থেকে ১ হাজার ৯২ কোটি টাকা, জুবিলী রোড শাখা থেকে ১ হাজার ১১৪ কোটি টাকা এবং ২৮ জানুয়ারি ৮২৭ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আহসানুল আলম এবং সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টসের মালিক আরিফুল ইসলাম চৌধুরীসহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করে দুদক।
গত ২১ আগস্ট এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম বা এস আলমের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে দুদক। ২০১৭ সালে গ্রুপটি ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকটির ঋণ জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে থাকে।