রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ :

সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্যে বিরোধ নেই : বদিউল আলম মজুমদার

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৬৬ বার পঠিত

সংস্কার এবং নির্বাচনের মধ্যে কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব নেই বলে মনে করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।

তিনি বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন হবে নাকি সংস্কার হবে– তা নিয়ে আলাপ–আলোচনা হচ্ছে। এই দুটি বিষয়ের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব দেখছি না। একটার বিপরীতে আরেকটা নয়। দুটোই দরকার। নির্বাচন হতে হবে, সেইসঙ্গে সংস্কার হতে হবে। আমাদের নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হতে হবে। সোমবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক ‘সম্প্রীতি সংলাপে’ তিনি এসব কথা বলেন। ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’ এর আয়োজন করে। সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ‘ইউকেএইড’।

এই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে এবং সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সংস্কার দরকার। কেননা যে পদ্ধতি ভেঙে পড়েছে, তা জোড়া লাগাতে হবে। তাই সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া টেকসই হবে না।

অনুষ্ঠানে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা নতুন বাংলাদেশের দ্বিতীয় পর্বে আমরা অবস্থান করছি। আমরা কতগুলো সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের রাষ্ট্র ভঙ্গুর হয়ে গেছে। চারদিকে অনেক অসংগতি। এদেশের নির্বাচনী সংস্কৃতি ভেঙে গেছে। এদেশের নির্বাচনী ও রাজনৈতিক অঙ্গন পরিচ্ছন্ন করতে হবে। টাকার খেলা বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করতে হবে। ভোটের অধিকারকে নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা যদি জাতি, ধর্ম, বর্ণ সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ থাকি, তাহলে আমরা শক্তিশালী হবো, কোনো অপপ্রচার চালিয়ে আমাদেরকে পিছিয়ে রাখা যাবে না।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন হাঙ্গার প্রজেক্টের ইন্টেরিম কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রশান্ত ত্রিপুরা, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মুহাম্মদ রফিক-উল ইসলাম, চার্চ অব ইংল্যান্ডের পলিসি অ্যাডভাইজার ড. চার্লস রীড, ঢাকার ব্রিটিশ হাই কমিশনের সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভাইজার (ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) তাহেরা জাবীন প্রমুখ।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত বিভিন্ন ধর্মীয় নেতৃত্ব, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং তরুণদের প্রতিনিধিবৃন্দ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শশাঙ্ক বরণ রায়।

অনুষ্ঠানের শেষভাগে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় তরুণদের সফলতার গল্প নিয়ে প্রকাশিত ‘ঐকতান’ নামের একটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

ইউকেএইডের সহযোগিতায় ও দি হাঙ্গার প্রজেক্টের আয়োজনে বাংলাদেশে সম্প্রীতির সুদীর্ঘ ঐতিহ্য বিস্তৃত করতে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ: এ বাংলাদেশ ফ্রিডম অব রিজিয়ন অর বিলিভ লিডারশিপ ইনিশিয়েটিভ’ কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে দেশের আটটি জেলায় ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা এবং সামাজিক সম্প্রীতি সুরক্ষায় তরুণ স্বেচ্ছাব্রতীদের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট আয়োজিত ‘সম্প্রীতি সংলাপে’ তিনি এ কথা বলেন।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা সবাই দেশকে ভালোবাসি এবং সবাই মিলে আমরা দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। বর্তমানে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা যদি জাতি, ধর্ম, বর্ণ সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ থাকি, তাহলে আমরা শক্তিশালী হবো, কোনো অপপ্রচার চালিয়ে আমাদেরকে পিছিয়ে রাখা যাবে না।

দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর ইন্টেরিম কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রশান্ত ত্রিপুরা বলেন, সমাজে নানান জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষের বসবাস থাকে, বিভিন্ন অভিরুচির মানুষ থাকে, সমাজে নানা বৈচিত্র্য রয়েছে। যে সমাজ ও রাষ্ট্র এই বৈচিত্র্যকে সম্মান দেখিয়ে তা ধারণ করতে পারে সে সমাজ ও রাষ্ট্র সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মুক্ত করতে পারে। এজন্য দরকার পারস্পরিক বোঝাপড়া ও মিথস্ক্রিয়া। আমি মনে করি, সম্প্রীতির প্রবণতা সহজাত, যা আমরা শিশুদের মধ্যে বেশি দেখতে পাই। কিন্তু আমরা তা মাঝে মাঝে ভুলে যাই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখানে সংস্কারের দাবি জোরালো হচ্ছে এবং সে প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে। আমরা আশা করি, প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে, যেখানে সবাই সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মুহাম্মদ রফিক-উল ইসলাম বলেন, প্রত্যেক ধর্মের মূল বাণী হলো সম্প্রীতি, শান্তি ও ভালোবাসা। বৌদ্ধ ধর্মের মর্মার্থ অনুযায়ী অহিংসার সমাজ গড়তে পারলে সমাজে সম্প্রীতি বজায় থাকবে, আর খ্রীষ্ট ধর্ম অনুযায়ী প্রেম ও ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে পারলে সমাজে হিংসা ও বিদ্বেষ থাকতে পারে না। আর ইসলাম ধর্মে আজানের মাধ্যমে কল্যাণময় সমাজ গঠনের আহ্বান জানানো হয়। আমাদের শিল্প-সাহিত্যেও সাম্য ও সম্প্রীতির কথা বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, ইসলাম ধর্মে ভিন্ন ধর্মের মানুষ ও প্রতিবেশীদের অধিকার রক্ষার কথা বারবার ব্যক্ত করা হয়েছে। আমাদের সব ধর্মেই মানুষের অধিকার রক্ষার কথা বলা হয়েছে। আমাদের উচিত হবে এসব কথা বেশি বেশি প্রচার করা, সম্প্রীতির বার্তা সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া। আমি মনে করি, ধর্মীয় নেতা ও তরুণরা সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন। তবে সবার আগে পরিবর্তন আনতে হবে আমাদের নিজেদের মধ্যে।

আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন চার্চ অব ইংল্যান্ডের এজন্টেস অব চেঞ্জ প্রজেক্ট এবং পলিসি অ্যাডভাইজার ডিরেক্টর (অপারেশন্স) ড. চার্লস রীড, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের রিলিজিয়াস সেক্রেটারি স্বরূপানন্দ ভিক্ষু, জেসাস কল চার্চ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান রেভারেন্ড ডেভিড বৈদ্য, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতির যুগ্ম সম্পাদক বিমল চন্দ্র চক্রবর্ত্তী, আহমদিয়া মুসলিম জামাতের এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্সের ডিরেক্টর আহমেদ তাবসির চৌধুরী প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো কিছু জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2024 nabakal.com
Design & Development BY Hostitbd.Com