ভ্যাট আদায়, চালান ইস্যু, হিসাবরক্ষণ, রিটার্ন দাখিলসহ ভ্যাটের যাবতীয় কাজ একটি ন্যাশনাল সিস্টেমের মাধ্যমে করার পরিকল্পনা জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান মঙ্গলবার (৪ মার্চ) আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ কথা জানান।
“স্বপ্ন দেখতে তো অসুবিধা নেই। হয়ত ৩০ বছর সময় লাগবে, লাগুক। আমরা শুরু করতে চাই,” বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি জানান, দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করেই এই ন্যাশনাল সিস্টেম চালু করা হবে। এই সিস্টেম চালু হলে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি কমবে এবং তারা এক জায়গা থেকেই ভ্যাটের সব কাজ সমাধান করতে পারবেন।
মঙ্গলবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই) বাজেট প্রস্তাবনা দেয়। এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, বর্তমানে অনেক কোম্পানিকে ভ্যাট সফটওয়্যার তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, এবং তারা ভিন্ন ভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এতে জনবলের অপচয় হচ্ছে, তাই একটি ন্যাশনাল সিস্টেমের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে।
এফআইসিসিআই’র সভাপতি জাভেদ আখতার তাদের বাজেট প্রস্তাবনায় সব পণ্য ও সেবায় ভ্যাটের নির্দিষ্ট হার নির্ধারণ, পরিবেশ ও জলবায়ু সুরক্ষায় ইলেক্ট্রিক গাড়ি এবং পাটজাত পণ্যে করভার কমানোর প্রস্তাব দেন। সংগঠনটির অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেসের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া কর-শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কারণে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তির কথা উল্লেখ করেন এবং ইটিডিএস, ইরিটার্ন ও রিটার্ন ফাইলিং ডেটাবেইসের মধ্যে সমন্বয় আনার প্রস্তাব দেন।
এমসিসিআই নগদ অর্থ লেনদেনের সীমা নির্ধারণের কারণে ব্যবসায়ীরা কর্পোরেট কর হ্রাসের সুবিধা নিতে পারছেন না বলে অভিযোগ করে। তারা কোম্পানির কর হারের ক্ষেত্রে নগদ লেনদেনের শর্ত বাতিলের প্রস্তাব জানায়। এমসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট কামরান তানভিরুর রহমান বলেন, নগদ লেনদেনের শর্তের কারণে অনেক কোম্পানি কর্পোরেট কর হ্রাসের সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। বাংলাদেশের অর্থনীতির ৮০ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক এবং সম্পূর্ণ ব্যাংকিং নির্ভর নয়। তাই এই শর্ত পালন করা কঠিন। তিনি আরও বলেন, কার্যকরী করহার অনেক বেশি, যা উৎসের কর কর্তন ও অননুমোদিত ব্যয়ের ফলে ক্ষেত্র বিশেষে ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছায়। তিনি কর্পোরেট কর হার বাস্তবিক হারে কমানোর পাশাপাশি, অগ্রিম আয়কর ও টার্নওভার কর নীতির সংস্কারের প্রস্তাব দেন। এছাড়া কর প্রশাসনের উন্নয়ন ও স্বয়ংক্রিয় ডিজিটালাইজেশন চালুর মাধ্যমে কর ফাঁকি কমানো এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির কথা বলেন তিনি।
এমসিসিআইয়ের অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে-টার্নওভারের ওপর ৬ শতাংশ অনুমোদনের বিধান করা, রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রে সংগ্রহে জরিমানার বিধান রহিত করা ইত্যাদি।