শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ :

১০টা ফেরাউন-নমরূদ একসঙ্গে করা হলেও হাসিনার সমান হবেনা- হাসনাত

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫
  • ১৪ বার পঠিত

আপনারা আওয়ামী লীগকে চিনতে পারেননি। এখন পর্যন্ত যে বা যারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেছে তাদের এর মূল্য দিতে হয়েছে। যদি ১০টা ফেরাউন আর ১০টা নমরূদ একসঙ্গে করা হয়, তাও হাসিনার সমান হবে না– বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।

তিনি আরো বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির নেই, যারা গণঅভ্যুত্থানে পরাজিত হয়েছে, তাদেরকে পুনরায় নির্বাচনে আসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হলে আমার-আপনার জীবন দিয়ে তার খেসারত দিতে হবে।”

শনিবার (২২ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে জাতীয় নাগরিক পার্টির ঢাকা মহানগরের আয়োজনে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এমন বক্তব্য রাখেন।

 

হাসনাত আবদুল্লাহ আরো বলেন, “যে জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেছিল, তাকে জীবন দিয়ে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। জামায়াত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করেছে, তাদের নেতাকর্মীদের ফাঁসির মাধ্যমে তা পরিশোধ হয়েছে। এরপর আবার আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হয়েছে, পিলখানা, শাপলা গণহত্যা ও দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মাধ্যমে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। আবারও যদি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হয়, আপনার-আমার জীবন দিয়ে তার খেসারত দিতে হবে।”

 

হাসনাত বলেন, “আমাদের সবকিছু হবে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্র কাঠামোর বাইরে রেখে। আওয়ামী লীগের নাম, মার্কা ও আদর্শ এদেশে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে। আপনারা যদি বিচার করতে পারেন, আগামী ১০০ বছরেও আওয়ামী লীগ ফিরতে পারবে না। এনসিপি যতদিন আছে, আওয়ামী লীগকে এদেশে পুনর্বাসন করার সুযোগ দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের বিচারের মধ্য দিয়ে তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল না, তারা ভারতীয় আধিপত্যবাদের অংশ। ৫ আগস্টের পর ভারতের হাতে থাকা আওয়ামী লীগের সুতা আমরা কেটে দিয়েছি।”

 

হাসনাত আব্দুল্লাহ বিনয়ের সাথে জবাব চান, “যারা আওয়ামী লীগকে রেখে ইনক্লুসিভ নির্বাচনের কথা বলেন, আমরা প্রশ্ন রাখতে চাই, ২০১৪ সালে যখন ১৫৩ আসনে ভোট হয়নি, তখন আপনাদের ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিল? ২০১৮ সালে যখন মিডনাইট ইলেকশন অনুষ্ঠিত হয়, তখন আপনাদের ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিল? ২০২৪ এ আওয়ামী ভার্সেস ডামি নির্বাচন হলো, তখন ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিল? যখন সিএমএইচে এরশাদকে বন্দি রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো, বিএনপিকে ক্ষমতা-গণতন্ত্রের কাঠামোর বাইরে রেখে, তখন আপনাদের ইনক্লুসিভ নির্বাচন কোথায় ছিলো?

হাসনাত আব্দুল্লাহ দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা দেন, যেই বাংলাদেশে ২ হাজার মানুষের রক্তের দাগ শুকায়নি, সেই বাংলাদেশে আওয়ামীলীগকে ফিরতে দেওয়া যাবে না। যে বাংলাদেশে শাপলা, পিলখানা, ভারতীয় আগ্রাসনের বিচার, আবরার হত্যাকাণ্ড, জুলাই অভ্যুত্থানের বিচার হয়নি, সেই বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের সঙ্গে নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই।”

 

স্পষ্ট কন্ঠে হাসনাত বলেন, আপনাদের যাদের কাজ ক্যান্টনমেন্টে, আপনারা ক্যান্টনমেন্টেই থাকুন। আমরা আপনাদের সম্মান জানাই, দেশের প্রতি অবদান স্বীকার করে নেই। কিন্তু ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাজনৈতিক পরিমন্ডলে যে নোংরা হস্তক্ষেপ করেছেন, ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে শুধুমাত্র রাজনীতিবীদরা। আপনারা তখন কোথায় ছিলেন? বিগত দেড়টা দশকে আমরা কোন জেনারেলকে দেখিনাই পদত্যাগ করতে। দেশে এতো অন্যায় অবিচার, গুম-খুন-জুলুম হয়েছে, আমরা কোনো সচিবকে দেখিনাই পদত্যাগ করতে। আমরা কাউকেই দেখিনাই এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করে কাউকে চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে হাসনাত বলেন, “আমরা আপনাদের কাছে যে আশা করেছিলাম, এখনো পর্যন্ত আপনাদের কাছে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। আপনারা এখনো আওয়ামী লীগের বিচার শুরু করতে পারেননি। আপনারা অতি দ্রুত বিচার কাজ শুরু করুন। আওয়ামীলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করুন। আওয়ামীলীগের বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ভারতীয় আধিপত্য এই বাংলাদেশে আর কখনো ফিরতে দেওয়া হবেনা।”

 

বিনয়ের সাথে একতার আহ্বান করে তিনি বলেন, “আমরা কোনো ইনস্টিটিউটের বিপক্ষে না। আওয়ামীলীগ যেসব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে, সেগুলোকে আমরা ঠিক করতে চাই। সেনাবাহিনীর ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে। আপনাদের ওপর এখনো আমরা আস্থা রাখতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি আপনারা আমাদের আস্থার প্রতিদান দেবেন। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, তাহলে আওয়ামীলীগ আর ফিরতে পারবে না। কিন্তু আপনারা যদি আওয়ামীলীগের সঙ্গে আপস করেন, তাহলে আমাদের মতো মজলুমদের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।”

 

বিক্ষোভ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহিন সরকার, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ, রফিকুল ইসলাম আইনি প্রমুখ।

 

বিক্ষোভ সমাবেশে নেতাকর্মীরা ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, আওয়ামী লীগের বিচার চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’ ‘দিল্লী না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ স্লোগান দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো কিছু জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2024 nabakal.com
Design & Development BY Hostitbd.Com