মঙ্গলবার বিকেল থেকে বাঘ দেখতে চিড়িয়াখানায় ভিড় করতে দেখা যায় দর্শনার্থীসহ উৎসুক মানুষজনকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর আম্বার আলী তালুকদার। এর আগে বিকেল ৩টার দিকে লাল কাপড়ে মোড়ানো লোহার দুটি খাঁচা এসে পৌঁছায় রংপুর চিড়িয়াখানার ফটকে। পরে সেখান থেকে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বরণ করা হয় রোমিও-জুলিয়েট নামের বাঘ দুটিকে।
সাড়ে ৩টার দিকে রংপুর চিড়িয়াখানায় রোমিও-জুলিয়েটের শুভাগমন ও জন্মদিন উপলক্ষ্যে খাঁচার সামনে কেককাটা হয়। এর পরই বহুদিনের শূন্য খাঁচা পূর্ণ করে ২ বছর বয়সী এই টাইগারজুটি।চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, সরকারি এই চিড়িয়াখানায় একটি মাত্র বাঘিনী ছিল। ২০০৩ সালের ৩০ জুন শাওন নামে ওই বাঘিনীর জন্ম হয়েছিল ঢাকার মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায়। সে হিসেবে মৃত্যুর আগে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ১৮ বছর ৭ মাস। ২০১০ সাল থেকে রংপুর চিড়িয়াখানায় তাকে সঙ্গীহীনভাবে খাঁচাবন্দি রাখা হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে সুস্থ-সবলই দেখা গেছে। মৃত্যুর আগে কোনো রোগে আক্রান্ত ছিল না। বার্ধক্যের কারণে শাওনের মৃত্যু হয়েছিল। বাঘ সাধারণত ১৫ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত বাঁচে।এদিকে নতুন বাঘ জোড়ার পরিচর্যা, খাদ্য সরবরাহসহ খাঁচা সংস্কার করেছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি দর্শনার্থীদের আকর্ষণ বড়োতে শুরু হয়েছে প্রচার-প্রচারণা।
বাঘের খাদ্য সরবরাহকারী রমজান আলী জানান, দীর্ঘদিন ধরে খাঁচাটি শূন্য ছিল। আজ এক জোড়া বাঘে পূর্ণতা পেল। আমরা ভীষণ আনন্দিত। বাঘ দুটির জন্য মাংস সরবরাহসহ অন্যান্য সবকিছুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের দিক থেকে বাঘের পরিচর্যায় কোনো ঘাটতি থাকবে।
চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর আম্বার আলী তালুকদার জানান, গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ১৬ দিন অভুক্ত থেকে মারা যায় চিড়িয়াখানার একমাত্র বাঘিনী ‘শাওন’। ফলে এতদিন বাঘ শূন্য ছিলো রংপুর চিড়িয়াখানা। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করছি একজোড়া বাঘ আনার জন্য। অবশেষে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা থেকে বাঘ বহনকারী গাড়িটি এসে পৌঁছেছে। এখন দর্শনার্থী বাড়ছে, সঙ্গে বাঘের খাঁচার সামনে শিশু-কিশোররা বেশি ভিড় করছে।
প্রসঙ্গত, দেশে দুটি সরকারি চিড়িয়াখানার মধ্যে রংপুরে একটি। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে রংপুর নগরীর হনুমানতলা এলাকায় ১৯৮৯ সালে রংপুর চিড়িয়াখানাটি গড়ে ওঠে। এটি দর্শনার্থীদের জন্য ১৯৯২ সালে খুলে দেওয়া হয়। প্রায় ২২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই চিড়িয়াখানাটিতে ৩৩ প্রজাতির ২৬০টি প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে সিংহ, বাঘ, জলহস্তী, হরিণ, অজগর সাপ, ইমু পাখি, উটপাখি, বানর, কেশওয়ারি, গাধা, ঘোড়া, ভাল্লুক উল্লেখযোগ্য। সম্পাদনা – শেখ মোস্তারি জান্নাত।